Paritosh Sen
Born
in Dhaka, Bangladesh
October 18, 1918
Died
October 22, 2008
Genre
More books by Paritosh Sen…
“একদিন বৃদ্ধ নবাব যথারীতি খানাপিনায় বসেছেন। নবাবের আনাভিলম্বিত সাদা দাড়ি। ইস্পাহানি মালাই কোরমার সঙ্গে বােগদাদি বিরিয়ানি খাবার বেলায় নবাবের দাড়ির জঙ্গলে অকস্মাৎ কয়েকটি ভাত ঝুলে থাকতে দেখা গেল। তারপর আরাে কয়েকটি। এইবারে তার শ্মশ্রুগুচ্ছ ক্রমশই একটি ভাতের মৌচাকের মতাে হয়ে উঠল। নবাবের সেদিকে কোনােই খেয়াল নেই বলে সদ্য-নিযুক্ত এক নােকর নবাবসাহেবকে খুশি করার উদ্দেশ্যে অতি উৎসাহে বলে ওঠে, “হুজুর, আপকা দাড়িমে চাউল লটক রহা হ্যায়।' সেই শুনে বৃদ্ধ নবাব তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। এত বড় আস্পর্ধা। নােকরকে গালিগালাজ করতে-করতে বলেন, ‘বে-বেয়াকুফ। বততমিজ! জাহিল, জঙ্গলী কাহিকা। খবরদার! আয়েন্দা ইস্ কিসিমকা বাত কিয়া তাে মু তােড় দেগা!' নােকর ভয়ে জড়সড়। তার মনে হল এই-বুঝি সে বরখাস্ত হয়। সঠিক কী বলা উচিত ছিল, সে-ব্যাপারে, নবাবসাহেব খানাপিনা থামিয়ে তক্ষুণি তাকে তালিম দিতে শুরু করলেন। যদি ভবিষ্যতে কোনাে অতিথির সামনে বেয়াদপি করে বসে। এধরনের পরিস্থিতিতে সরাসরি কিছু না-বলে, সে-কথাটি ঘুরিয়ে, চোস্ত উর্দুতে, রূপকে অলংকরণে বলতে হবে যে, হুজুর, শাখেমে গুল, আউর হ্যায় দো বুলবুল। নবাবের হুকুমে হতভাগা নােকরকে এটি একশােবার কান ধরে ওঠবােসের সঙ্গে পুনরাবৃত্তি করতে হ’ল।”
― জিন্দাবাহার
― জিন্দাবাহার
“শিল্পের বিভিন্ন রূপগুলি যে অলঙ্ঘ্য প্রাচীর দেওয়া কতকগুলি স্বতন্ত্র জগতের অধিবাসী নয়, শিল্পে-শিল্পে যে অন্তর্প্লাবন সম্ভব, এক শিল্পরূপ উপচে পড়তে পারে এবং পড়েও অপর শিল্পে, এ-কথা পরিতােষ সেন জানবেন না তাে জানবেন কে?" - অমলেন্দু বসু, ভূমিকা”
― জিন্দাবাহার
― জিন্দাবাহার
“তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসি। একটা কৌটোতে, মা-র রাখা একটি অচল দু'আনি অনেকদিন ধরেই দেখি। চুপি-চুপি সেটিকে তুলে নিই। দ্রুতবেগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে, আমাদের পাড়ার মসজিদের সামনে হাজির হই। সেখানে, প্রত্যহই, একটি অন্ধ ভিখিরি, হাঁটু ভাজ করে বসে। দেখতে অবিকল একটি দরবেশের মতাে। সিমাইয়া রঙের তব চুল এবং দাড়ি। খােলা হাত-দুটি প্রার্থনার ভঙ্গিতে বুকের সঙ্গে সংযুক্ত। পাশে একটি বাঁশের লাঠি। আকাশের দিকে মুখ তুলে বলে, ‘এক প্যায়সা ইস আন্ধাকো দেওগে তাে, মালিক তুমকো লাখ দেগা। সামনে একটি টিনের কৌটো। সেটির ভেতব পাইপয়সা আধপয়সা, এক পয়সা এবং কয়েকটি এক আনি পড়ে আছে। কৌটোর অন্ধকার গহ্বরে এই পয়সাগুলাে, টাকশালের সদ্য-তৈরি মুদ্রার মতাে ঝকঝক করে। সন্ধের স্তিমিত আলােয় বাড়িঘব লােকজন, ছায়ার মতাে আবছা দেখায়। একহাত উঁচু থেকে অচল দু-আনিটা আমি কৌটোর ভেতর ফেলি । সঙ্গে-সঙ্গে খঞ্জনি এং একতারার মতাে সমবেত একটি ধ্বনি কৌটোর ভেতর থেকে সরল রেখায় উঠে এল। বৃদ্ধ অন্ধটি, খােদার কাছে, আমার এবং সন্তান-সন্ততির মঙ্গল ভিক্ষে করল। আমি এদিক-ওদিক তাকিয়ে কৌটোটি থেকে আলতো করে দু-তিনটি এক আনি তুলে নিয়ে, এক দৌড়ে বাবুরবাজারের দোকানটির সামনে হাজির হলাম। এই বাদশাহী খাবার লােভে মানুষ কী-না করতে পারে। দোকানটিতে ঢুকে আমি আকণ্ঠ সেই খাবার খেলাম। আঃ। কী অপার্থিব, কী অবর্ণনীয় স্বাদ। রসনার কী অসাধারণ তৃপ্তি। এই একক অভিজ্ঞতাটি ভবিষ্যৎ জীবনে, আমার মনে এমনই এক গভীর ছাপ ফেলে যে, আজ পর্যন্তও তা মুছে ফেলতে পারিনি।”
― জিন্দাবাহার
― জিন্দাবাহার