শবশিঙা প্রিভিউ (শেষ পর্ব)
সতর্কীকরণ
ম্যাচিউর কন্টেন্ট | ভায়োলেন্স | PG 18+
গত পর্ব : ক্লিক করুন
পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় জাফর বুঝলো এরচেয়ে সহজ সুযোগ আর সে পাবে না। তাই সেলিম যখনই তাকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে যাচ্ছিল ঠিক তখনই সেলিমের পিঠে সে সজোরে আমূল বিঁধিয়ে দেয় ছুরিটা। জাফরকে বিস্মিত আর বিস্ফারিত চোখে ঘুরে দেখে ধপ করে একপাশ হয়ে পড়ে যায়। সেলিমকে পা দিয়ে চেপে ধরে ছুরিটা বের করে লাথি দিয়ে চিৎ করে ঘুরিয়ে নেয়। তখনো সে মরেনি। এবার জাফর ছুরিটা গেঁথে দেয় সেলিমের পুরুষাঙ্গ বরাবর। খুব একটা প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে না সেলিম। ধনুষ্টংকার রোগীর মতো বেঁকে ওঠে। ওভাবেই রয়ে যায়—মূর্তি হয়ে।
দূর থেকে এই আকস্মিক ঘটনাটা রুবেল দেখে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করে অবস্থাটা। দ্রুতই সে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। হাতে থাকা বালতি, মগ, ব্রাশসহ পরিষ্কার করার অন্যান্য জিনিসগুলো ফেলে দৌড় দেয়। খুব বেশিদূর দৌড়াতে পারে না। উঠানে বাড়ির দেওয়ালে ঠেস দিয়ে রাখা সেই বল্লমটা হাতে নিয়ে শরীরের সমস্ত জোর একসাথে করে ছুড়ে মারে জাফর। বল্লমটা তার আস্থা রাখে। এফোঁড়ওফোঁড় করে দেয় রুবেলকে।
এবার মাটিতে হাত-পা ছড়িয়ে ধপ করে বসে পড়ে জাফর। আর শরীরে যেন আর কোনো শক্তি অবশিষ্ট নেই। বুকের সাথে লেগে গেছে থুঁতনি। প্রতিশোধ নেওয়া শেষ হতে না হতেই মাথা যেন একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে, শান্ত হয়ে গেছে মন। আর ঠিক একারণেই সে ভাবতে পারলো, তিন-তিনটা খুনের দায় এখন তার মাথায়। তার মধ্যে একটা খুন হলো ক্ষমতাসীন দলের এক সদস্য, গ্রামের চেয়ারম্যান আর প্রভাবশালী লোক শামসুল। ফাঁসি-ই তার একমাত্র শাস্তি। কী করবে এখন সে? বেঁচে থাকতে হলে পালাতে হবে। উঠে একবার আলেয়ার কাছে যেতে চাইলো। আবার পরক্ষণেই নিজেকে বোঝালো, ওই অবস্থায় আরেকবার তাকে দেখলে সে নিজেকেই শেষ করে দিতে চাইবে।
চেয়ারম্যানের এই আস্তানাটা কিছুটা নির্জন হওয়ায় হয়তো গ্রামবাসীদের জানতে দেরি হবে, কিন্তু খুব একটা সময় লাগবে না। নিজেকে জোর করে দাঁড় করায়। মাটিতে পা ঘষে ঘষে আস্তানা থেকে বেরিয়ে আসে। অন্ধকার হয়ে আসায় সহজে কেউ তাকে খেয়াল করতে পারবে না ভেবে হাঁটতে শুরু করে।
এরপরের দিনগুলো কেবল পালিয়ে বেড়ানোর। অভাব নেই চেয়ারম্যানের শুভাকাঙ্ক্ষীর। তাই একজায়গায় লুকিয়ে থাকার মতো অবস্থা নেই। আর তাই এসময় সে খেয়াল করে আসলে তার কোথাও পালিয়ে যাওয়ার জায়গা নেই। অথচ আগে মনে করেছিল দুনিয়াটা মস্ত বড়ো। ক্ষুধায় কাতর হয়ে চুরি করতে যাওয়ার দুঃসাহস সে দেখাতে পারেনি। পাছে ধরা পড়ে যায়, আর ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ফাঁসি কাষ্ঠে। একটা সময় বুঝতে পারে গোরস্থান লুকানোর জন্য চমৎকার এক জায়গা। বিশেষ করে পুরোনো গোরস্থান। সেখানেই এক রাতে সে প্রথম দেখা পায় শবখাদকের। তার সাথে মিলে শব খাওয়ার সময় বুঝতে পারে ক্ষুধার্ত পেটে পচাগলা মাংসও যে এতটা সুস্বাদু লাগবে পারে। আর এভাবেই সে ঢুকে পড়ে একটা শবখাদকের দলে। এই অভিজ্ঞতাই পরে তাকে অন্যান্য শবখাদকের দলে ভিড়তে সহজ করে দিয়েছে।
সর্বশেষ যে শবখাদকের দলে সে ঢুকেছিল সেই দল ধরা পড়ে বিষাণের হাতে। তার ভাগ্য ভালো কিংবা খারাপ ছিল। তার ঘাড়ে লাগে অজ্ঞান করার ডাঁট। পরবর্তীতে সে যোগ দেয় বিষাণে। টিকটিকি বানানোর জন্য বিষাণ তাদের দলে এরকম ধরে সিঁধে বানানো শবখাদকদের প্রায়ই ঢোকায়। কেননা, এরা খুব সহজেই শব খেয়ে শবখাদকদের দলে ঢুকতে পারে যেটা সাধারণ বিষাণরা পারে না। যেহেতু তার ঘাড়ে মার্ডার কেস ঝুলছে তাই তার পরিচয় খুব কম বিষাণদের কাছে রাখা হয়। আর সেইসাথে সুযোগ পায় মার্ডার কেস থেকে রেহাই পাবার সুযোগ। আর সুযোগটা হাতে আসে একটা গোপন শর্তে, যদি সে মজিদকে শব বানাতে পারে কেবল তবে।
☠
বুকপকেটে হুমায়ূনের চশমাটা নিয়ে দাঁড়ায় একটা বাড়ির সামনে। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। পুরো বাড়ি অন্ধকার। এই বাড়িটা হুমায়ূনের।
বাজারে যাবার আগে যখন সে হুমায়ূনের সাথে কথা বলেছিল তখনই তার বাড়ির ঠিকানা শুনে নেয়। জানে যে এরপর আর শোনার সুযোগ হবে না। মোটরসাইকেলে করে ঘণ্টা দুয়েকের পথ ছিল। বিষাণদের অফিসে এসেই একটা মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা দেয়। প্রশিক্ষণের সময় মোটরসাইকেল চালানো শেখাটা এখন খুব কাজে দিচ্ছে।
কেন যেন সে অনুভব করছিল যে তার সময় শেষ হয়ে এসেছে। আর এই কাজটা তার মরার আগেই করে যে করেই হোক করে ফেলতে হবে। মা ছাড়া মাতাল বাবার সংসারে বড়ো হওয়া জাফর জানে মায়ের অভাব কাকে বলে।
আলেয়ার কথা খুব মনে পড়ছে তার। আলেয়া কাগজের নৌকা বানাতে খুব পছন্দ করতো। খুব আনন্দ পেত পানিতে ভাসিয়ে। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। তার আনন্দ পেত চরম পূর্ণতা। স্মৃতিটাকে জাফর হারিয়ে যেতে দেয়নি। এখনও প্রায়ই বুকপকেটে একটা কাগজের নৌকা রাখে। ভাসিয়ে দেওয়ার সুযোগ পেলে ভাসিয়ে দেয়।
প্যান্টের পকেটে হাত ঢোকালে একটা শিশির অস্তিত্ব টের পায়। একহাতে শিশিটা নিয়ে বাড়িটার দিকে এগিয়ে যায়। আসার পথেই আশেপাশের এক দোকানে খোঁজ নিয়ে জেনেছে এই বাড়িতে হুমায়ূনের বাবা আর নতুন মা ছাড়া আপাতত আর কেউ নেই। খোঁজ নেওয়ার সময় চেষ্টা করেছে নিজেকে আড়ালে রাখার, তবে দেখলেও সমস্যা নেই। কেউ তাকে খুঁজে পাবে না। জাফরের আরেক হাতে হাফ লিটারের দুইটা দুধের প্যাকেট। খোঁজ নেওয়ার সময় দোকানটা থেকে নিয়েছিল। কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়।
রান্নাঘর থেকে নেওয়া ছুরি দেখিয়ে ঘুম থেকে চকিত ডেকে ওঠানো দুজন মানুষকে দুধ খাওয়াতে তার খুব একটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। খুনি দম্পতি ভয় পাওয়ার চেয়ে বরং অবাকই হয়েছিল বেশি।
জাফর যখন মোটরসাইকেল চালু করে ততক্ষণে দম্পতি বিছানায় গড়াগড়ি দিচ্ছে প্রবল “প্যাটের বেদনা”য়। শীঘ্রই তারা হুমায়ূনের মুখোমুখি হবে। জাফর আশা করছে মৃত্যুর পরের জগতে হুমায়ূন আর সেই বোকাসোকা নেই, কারণ তার সাথে এখন তার “আম্মা” আছেন।
মোটরসাইকেলটা রেখে মজিদ মিয়ার বাড়ির পথ ধরতে ধরতে বেলা গড়িয়ে গেছে বেশখানিকটা। সাথে একটা ছুরি নিয়েছে। সেই সাথে করে নিয়েছে একটা পরিকল্পনা। মজিদ মিয়াকে একা পাবে বলে শুনেছে। এই সুযোগ আর পাওয়া না-ও যেতে পারে। তাই এই সুযোগটা সে হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না। মজিদ মিয়াকে মেরে সে জানাবে, কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ভুলে ঘটে গেছে। যেহেতু বিষাণের প্রধানই তার পক্ষে আছেন, তাই ঝামেলা এড়াতে খুব একটা সমস্যা হবে না।
মজিদ মিয়ার বাসায় আসতে আসতে হুট করে আবহাওয়া প্রচণ্ড খারাপ হয়ে গেল। ভীষণ জোরে বজ্রপাত হচ্ছে। যখন সে উঠানে পা রাখলো চমকে উঠলো হাশেম ভাইয়ের দলের এক ছেলেকে দেখে। মনে পড়ে গেল সে দুজনকে পালাতে দেখেছিল। হুমায়ূনের উত্তেজনায় ভুলে গিয়েছিল একদমই। সেই ছেলেটা কিছুক্ষণ থমকে থেকে তাকে দেখলো। হঠাৎ করে বলে উঠলো, “তোর বুকপকেটে হুমায়ূনের চশমা ক্যা?”
প্রত্যুত্তরে নিজের অজান্তেই জাফর বলে উঠলো, “তুই মরস নাই?”
তার হাতে স্বংয়ক্রিয়ভাবে চলে আসে মজিদ মিয়াকে মারার জন্য আনা সেই ছুরি। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে ভীষণ ক্ষিপ্রতায় ছুরিটা কেড়ে নিয়ে তার বুকে আমূল বসিয়ে দেয় ছেলেটা। সে অনুভব করলো তার ফুসফুস থেকে সমস্ত বাতাস বেরিয়ে যাচ্ছে, সেখানে ভরে যাচ্ছে রক্তে। দম আটকে গেছে। শেষবারের মতো বুকপকেটে হাত রাখে সে। নৌকাটাকে ছোঁয়ার আগেই সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসে। উঠানে জমা বৃষ্টির পানিতে মৃদু ছলাৎ শব্দে পড়ে যায় তার নিঃস্পন্দ দেহ।
তার মৃতদেহ ভিজতে থাকে বৃষ্টির পানিতে। বুকপকেটে থাকা সাদা নৌকাটা চুপসে যায় কিছুটা বৃষ্টির পানিতে, আর অনেকটা রক্তে, টকটকে লাল রক্তে...
প্রিভিউ সমাপ্ত
বই : শবশিঙা
লেখক : সজল চৌধুরী
জনরা : ডার্ক থ্রিলার
প্রকাশনা : ভূমিপ্রকাশ
ম্যাচিউর কন্টেন্ট | ভায়োলেন্স | PG 18+
গত পর্ব : ক্লিক করুন
পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় জাফর বুঝলো এরচেয়ে সহজ সুযোগ আর সে পাবে না। তাই সেলিম যখনই তাকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে যাচ্ছিল ঠিক তখনই সেলিমের পিঠে সে সজোরে আমূল বিঁধিয়ে দেয় ছুরিটা। জাফরকে বিস্মিত আর বিস্ফারিত চোখে ঘুরে দেখে ধপ করে একপাশ হয়ে পড়ে যায়। সেলিমকে পা দিয়ে চেপে ধরে ছুরিটা বের করে লাথি দিয়ে চিৎ করে ঘুরিয়ে নেয়। তখনো সে মরেনি। এবার জাফর ছুরিটা গেঁথে দেয় সেলিমের পুরুষাঙ্গ বরাবর। খুব একটা প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে না সেলিম। ধনুষ্টংকার রোগীর মতো বেঁকে ওঠে। ওভাবেই রয়ে যায়—মূর্তি হয়ে।
দূর থেকে এই আকস্মিক ঘটনাটা রুবেল দেখে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করে অবস্থাটা। দ্রুতই সে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। হাতে থাকা বালতি, মগ, ব্রাশসহ পরিষ্কার করার অন্যান্য জিনিসগুলো ফেলে দৌড় দেয়। খুব বেশিদূর দৌড়াতে পারে না। উঠানে বাড়ির দেওয়ালে ঠেস দিয়ে রাখা সেই বল্লমটা হাতে নিয়ে শরীরের সমস্ত জোর একসাথে করে ছুড়ে মারে জাফর। বল্লমটা তার আস্থা রাখে। এফোঁড়ওফোঁড় করে দেয় রুবেলকে।
এবার মাটিতে হাত-পা ছড়িয়ে ধপ করে বসে পড়ে জাফর। আর শরীরে যেন আর কোনো শক্তি অবশিষ্ট নেই। বুকের সাথে লেগে গেছে থুঁতনি। প্রতিশোধ নেওয়া শেষ হতে না হতেই মাথা যেন একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে, শান্ত হয়ে গেছে মন। আর ঠিক একারণেই সে ভাবতে পারলো, তিন-তিনটা খুনের দায় এখন তার মাথায়। তার মধ্যে একটা খুন হলো ক্ষমতাসীন দলের এক সদস্য, গ্রামের চেয়ারম্যান আর প্রভাবশালী লোক শামসুল। ফাঁসি-ই তার একমাত্র শাস্তি। কী করবে এখন সে? বেঁচে থাকতে হলে পালাতে হবে। উঠে একবার আলেয়ার কাছে যেতে চাইলো। আবার পরক্ষণেই নিজেকে বোঝালো, ওই অবস্থায় আরেকবার তাকে দেখলে সে নিজেকেই শেষ করে দিতে চাইবে।
চেয়ারম্যানের এই আস্তানাটা কিছুটা নির্জন হওয়ায় হয়তো গ্রামবাসীদের জানতে দেরি হবে, কিন্তু খুব একটা সময় লাগবে না। নিজেকে জোর করে দাঁড় করায়। মাটিতে পা ঘষে ঘষে আস্তানা থেকে বেরিয়ে আসে। অন্ধকার হয়ে আসায় সহজে কেউ তাকে খেয়াল করতে পারবে না ভেবে হাঁটতে শুরু করে।
এরপরের দিনগুলো কেবল পালিয়ে বেড়ানোর। অভাব নেই চেয়ারম্যানের শুভাকাঙ্ক্ষীর। তাই একজায়গায় লুকিয়ে থাকার মতো অবস্থা নেই। আর তাই এসময় সে খেয়াল করে আসলে তার কোথাও পালিয়ে যাওয়ার জায়গা নেই। অথচ আগে মনে করেছিল দুনিয়াটা মস্ত বড়ো। ক্ষুধায় কাতর হয়ে চুরি করতে যাওয়ার দুঃসাহস সে দেখাতে পারেনি। পাছে ধরা পড়ে যায়, আর ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ফাঁসি কাষ্ঠে। একটা সময় বুঝতে পারে গোরস্থান লুকানোর জন্য চমৎকার এক জায়গা। বিশেষ করে পুরোনো গোরস্থান। সেখানেই এক রাতে সে প্রথম দেখা পায় শবখাদকের। তার সাথে মিলে শব খাওয়ার সময় বুঝতে পারে ক্ষুধার্ত পেটে পচাগলা মাংসও যে এতটা সুস্বাদু লাগবে পারে। আর এভাবেই সে ঢুকে পড়ে একটা শবখাদকের দলে। এই অভিজ্ঞতাই পরে তাকে অন্যান্য শবখাদকের দলে ভিড়তে সহজ করে দিয়েছে।
সর্বশেষ যে শবখাদকের দলে সে ঢুকেছিল সেই দল ধরা পড়ে বিষাণের হাতে। তার ভাগ্য ভালো কিংবা খারাপ ছিল। তার ঘাড়ে লাগে অজ্ঞান করার ডাঁট। পরবর্তীতে সে যোগ দেয় বিষাণে। টিকটিকি বানানোর জন্য বিষাণ তাদের দলে এরকম ধরে সিঁধে বানানো শবখাদকদের প্রায়ই ঢোকায়। কেননা, এরা খুব সহজেই শব খেয়ে শবখাদকদের দলে ঢুকতে পারে যেটা সাধারণ বিষাণরা পারে না। যেহেতু তার ঘাড়ে মার্ডার কেস ঝুলছে তাই তার পরিচয় খুব কম বিষাণদের কাছে রাখা হয়। আর সেইসাথে সুযোগ পায় মার্ডার কেস থেকে রেহাই পাবার সুযোগ। আর সুযোগটা হাতে আসে একটা গোপন শর্তে, যদি সে মজিদকে শব বানাতে পারে কেবল তবে।
☠
বুকপকেটে হুমায়ূনের চশমাটা নিয়ে দাঁড়ায় একটা বাড়ির সামনে। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। পুরো বাড়ি অন্ধকার। এই বাড়িটা হুমায়ূনের।
বাজারে যাবার আগে যখন সে হুমায়ূনের সাথে কথা বলেছিল তখনই তার বাড়ির ঠিকানা শুনে নেয়। জানে যে এরপর আর শোনার সুযোগ হবে না। মোটরসাইকেলে করে ঘণ্টা দুয়েকের পথ ছিল। বিষাণদের অফিসে এসেই একটা মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা দেয়। প্রশিক্ষণের সময় মোটরসাইকেল চালানো শেখাটা এখন খুব কাজে দিচ্ছে।
কেন যেন সে অনুভব করছিল যে তার সময় শেষ হয়ে এসেছে। আর এই কাজটা তার মরার আগেই করে যে করেই হোক করে ফেলতে হবে। মা ছাড়া মাতাল বাবার সংসারে বড়ো হওয়া জাফর জানে মায়ের অভাব কাকে বলে।
আলেয়ার কথা খুব মনে পড়ছে তার। আলেয়া কাগজের নৌকা বানাতে খুব পছন্দ করতো। খুব আনন্দ পেত পানিতে ভাসিয়ে। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। তার আনন্দ পেত চরম পূর্ণতা। স্মৃতিটাকে জাফর হারিয়ে যেতে দেয়নি। এখনও প্রায়ই বুকপকেটে একটা কাগজের নৌকা রাখে। ভাসিয়ে দেওয়ার সুযোগ পেলে ভাসিয়ে দেয়।
প্যান্টের পকেটে হাত ঢোকালে একটা শিশির অস্তিত্ব টের পায়। একহাতে শিশিটা নিয়ে বাড়িটার দিকে এগিয়ে যায়। আসার পথেই আশেপাশের এক দোকানে খোঁজ নিয়ে জেনেছে এই বাড়িতে হুমায়ূনের বাবা আর নতুন মা ছাড়া আপাতত আর কেউ নেই। খোঁজ নেওয়ার সময় চেষ্টা করেছে নিজেকে আড়ালে রাখার, তবে দেখলেও সমস্যা নেই। কেউ তাকে খুঁজে পাবে না। জাফরের আরেক হাতে হাফ লিটারের দুইটা দুধের প্যাকেট। খোঁজ নেওয়ার সময় দোকানটা থেকে নিয়েছিল। কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়।
রান্নাঘর থেকে নেওয়া ছুরি দেখিয়ে ঘুম থেকে চকিত ডেকে ওঠানো দুজন মানুষকে দুধ খাওয়াতে তার খুব একটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। খুনি দম্পতি ভয় পাওয়ার চেয়ে বরং অবাকই হয়েছিল বেশি।
জাফর যখন মোটরসাইকেল চালু করে ততক্ষণে দম্পতি বিছানায় গড়াগড়ি দিচ্ছে প্রবল “প্যাটের বেদনা”য়। শীঘ্রই তারা হুমায়ূনের মুখোমুখি হবে। জাফর আশা করছে মৃত্যুর পরের জগতে হুমায়ূন আর সেই বোকাসোকা নেই, কারণ তার সাথে এখন তার “আম্মা” আছেন।
মোটরসাইকেলটা রেখে মজিদ মিয়ার বাড়ির পথ ধরতে ধরতে বেলা গড়িয়ে গেছে বেশখানিকটা। সাথে একটা ছুরি নিয়েছে। সেই সাথে করে নিয়েছে একটা পরিকল্পনা। মজিদ মিয়াকে একা পাবে বলে শুনেছে। এই সুযোগ আর পাওয়া না-ও যেতে পারে। তাই এই সুযোগটা সে হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না। মজিদ মিয়াকে মেরে সে জানাবে, কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ভুলে ঘটে গেছে। যেহেতু বিষাণের প্রধানই তার পক্ষে আছেন, তাই ঝামেলা এড়াতে খুব একটা সমস্যা হবে না।
মজিদ মিয়ার বাসায় আসতে আসতে হুট করে আবহাওয়া প্রচণ্ড খারাপ হয়ে গেল। ভীষণ জোরে বজ্রপাত হচ্ছে। যখন সে উঠানে পা রাখলো চমকে উঠলো হাশেম ভাইয়ের দলের এক ছেলেকে দেখে। মনে পড়ে গেল সে দুজনকে পালাতে দেখেছিল। হুমায়ূনের উত্তেজনায় ভুলে গিয়েছিল একদমই। সেই ছেলেটা কিছুক্ষণ থমকে থেকে তাকে দেখলো। হঠাৎ করে বলে উঠলো, “তোর বুকপকেটে হুমায়ূনের চশমা ক্যা?”
প্রত্যুত্তরে নিজের অজান্তেই জাফর বলে উঠলো, “তুই মরস নাই?”
তার হাতে স্বংয়ক্রিয়ভাবে চলে আসে মজিদ মিয়াকে মারার জন্য আনা সেই ছুরি। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে ভীষণ ক্ষিপ্রতায় ছুরিটা কেড়ে নিয়ে তার বুকে আমূল বসিয়ে দেয় ছেলেটা। সে অনুভব করলো তার ফুসফুস থেকে সমস্ত বাতাস বেরিয়ে যাচ্ছে, সেখানে ভরে যাচ্ছে রক্তে। দম আটকে গেছে। শেষবারের মতো বুকপকেটে হাত রাখে সে। নৌকাটাকে ছোঁয়ার আগেই সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসে। উঠানে জমা বৃষ্টির পানিতে মৃদু ছলাৎ শব্দে পড়ে যায় তার নিঃস্পন্দ দেহ।
তার মৃতদেহ ভিজতে থাকে বৃষ্টির পানিতে। বুকপকেটে থাকা সাদা নৌকাটা চুপসে যায় কিছুটা বৃষ্টির পানিতে, আর অনেকটা রক্তে, টকটকে লাল রক্তে...
প্রিভিউ সমাপ্ত
আমরা শবখাদক। আর ওরা শবখাদকদের ঘাতক—বিষাণ। আমাদের মধ্যে লড়াইটা নেকড়ে আর ভেড়ার মতো। কখনো আমরা ভেড়া তারা নেকড়ে, আবার কখনো তারা ভেড়া আমরা নেকড়ে। এই ভেড়া-নেকড়ের মধ্যে ঢুকে গেছে কিছু হায়েনা। ভেড়া আর নেকড়ে উভয়ই তার লক্ষ্যবস্তু। এই ভেড়া-নেকড়ে-হায়েনার ত্রিমুখী যুদ্ধে আপনাকে আমি আমন্ত্রণ বা নিমন্ত্রণ কোনোটাই করতে পারছি না। কারণ, এ-জগতে কেউ ঢুকলে তার লাশও বের হতে পারে না। তাই সিদ্ধান্ত পুরোটাই আপনার। সাহস আছে? থাকলে ঢুকে পড়ুন বীভৎস, হিংস্র, রোমাঞ্চকর জগৎ “শবশিঙা”য়।
বই : শবশিঙা
লেখক : সজল চৌধুরী
জনরা : ডার্ক থ্রিলার
প্রকাশনা : ভূমিপ্রকাশ
Published on November 18, 2021 10:18
•
Tags:
adult, bengali, crime-fiction, dark, fiction, mystery, preview, suspense-thriller, thriller
No comments have been added yet.